বনপাড়ার প্রৌঢ় খ্রীষ্টান ক্রেডিট ইউনিয়ন: সুবল এল রোজারিও

‘সমবায়’ একটি সম্মিলিত সামাজিক এবং আর্থিক উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান। এমনই জানি ও শিখেছিলাম শ্রদ্ধেয় স্বর্গীয় ফাদার ইয়াং সি.এস.সি, স্বর্গীয় দীনো বন্ধু বাড়ৈ এবং ভিনসেন্ট রড্রিক্স- এর কাছ থেকে। এরপর, ১৮৬ নং সদস্য হিসাবে স্বর্গীয় ফাদার লুইজী পিনোস পিমে এবং পরবর্তী আরো অনেক পাল পুরোহিতের কাছ থেকে।

সেই ১৯৬৫ থেকে আজ ২০১৪ খ্রীঃ অনেক লম্বা সময়ের পথ অতিক্রম করেছে “বনপাড়া খ্রীষ্টান ঋণদান সমবায় সমিতি লিঃ”। এখন সে প্রৌঢ়ত্ব গ্রহণ করে বার্ধক্যের পথে এগুচ্ছে সম্ভাবনাময় দক্ষ নতুন প্রজন্মের হাত ধরে। খুব ভাল সংবাদ! এখন চারা গাছটি বেশ বড় হয়ে ডাল-পালা, পাতা-লতা এবং শিকড় গজাচ্ছে। খুবই ভাল সুখ-সংবাদ!

এখন, বড্ড মনে পড়ছে এর সৃষ্টি থেকে আজ অবধি যাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও রক্ত-ঘামের ফসল আজকে এই “সমিতি” তাঁদের কথা। তাঁদের মৃত শরীরের ও আত্মার তৃপ্তির কথা। আর, তাঁরা হলেন বরেণ্য মৃত পল গমেজ (পলিক মাষ্টার), পিটার পিরিছ (পিটার মাষ্টার), ডানিয়েল কোড়াইয়া (দানিয়েল মাষ্টার), ফ্রান্সিস কস্তা (ফ্রান্সিস মাষ্টার), ফ্রান্সিস ক্রুশ (ফেরু মাষ্টার), রাফায়েল পেরেরা, রাফায়েল রিবেরু (রায়েল মাষ্টারদ্বয়), পল কস্তা (পল মাষ্টার) এবং পল পিরিছ (পল মাষ্টার) ইত্যাদি সব মৃত “মাষ্টার”দের ছড়াছড়ি। আর, পঞ্চাশ বছর পর এখনো কিছু সংখ্যক “মাষ্টার” এবং তাঁদেরই “ছাত্র-ছাত্রী” গণ এই সমবায় রক্ষার্থে একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। তা অত্যন্ত প্রশংসা ও ধন্যবাদ পাবার যোগ্যতা রাখে বটে। জয় হোক তাঁদের। জয়তু “সুবর্ণ” জুবিলী অনুষ্ঠান!

এবার আসি এই মহৎ সমিতির কাঠামোগত কিছু কথায়। আমি তখন বাংলাদেশ বিশপ সম্মিলনীর সংস্থা “কারিতাস বাংলাদেশ” রাজশাহী অঞ্চলের ‘শিক্ষা কর্মকর্তা’। আর, স্বর্গীয় ভিনসেন্ট রড্রিক্সের ছোট ভাই স্বর্গীয় জেরম রড্রিক্স- এর সাথে ক্রেডিট প্রোগ্রাম গতিশীল করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক এবং এলাকা ভিত্তিক সংগঠন করি। তার নাম দেয়া হয় “চ্যাপ্টার”। জানিনা তার খবরটি কেমন- চ্যাপ্টা না মৃত! এরপর জাতীয় ভিত্তিতে ও এলাকা ভিত্তিতে কাজ শুরু করে “কাল্ব”। খুবই ভাল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। বর্তমানে এরই মাধ্যমে জাতী-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ এই সমবায় আন্দোলন স¤প্রসারিত এবং ফলবান অবস্থায়। ভেবে এবং দেখে খুবই তৃপ্তি পাই। ধন্যবাদ ঈশ্বর এবং সদস্যদের। এই সমবায় আন্দোলন দীর্ঘজীবি হোক এবং সকল মানুষের কল্যাণ, মঙ্গল ও উন্নয়ন স¤প্রসারিত করুক।

অবশেষে, গভীর আশা এবং কামনা আমাদের বনপাড়া খ্রীষ্টান ঋণদান সমিতি যেন “হীরক” জুবিলী এবং তার উর্ধ্বে কিছু করতে পারে। এবং এর ফলাফল যেন অধিক সংখ্যক দরিদ্র, মাঝারী এবং উচ্চমাঝারী পরিবারগুলোর আর্থ-সামাজিক, পারিবারিক এবং আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধন করতে সক্ষম হয়। তবে, সবার মনে বিশ্বাস এবং ভালবাসা পোষণ করতে হবে এই মর্মে যে, “ক্রেডিট ইউনিয়ন” একটি মুক্তির সেঁতু বন্ধন বা সোপান”। একে যেন কেউ “মৃত্যুর সোপান” না বানায় এদিকে নতুন প্রজন্মের কর্মীদের সতর্ক সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে প্রত্যেককে।

শেষ প্রার্থনা সৃষ্টিকর্তার কাছে এই- “তুমি প্রভু জীবন দিয়ে সকল মানবের মুক্তি সাধন করেছো, আমাদের এই সমবায়কে ব্যবহার করো জীবন দিয়ে মুক্তি সাধনে। এই প্রৌঢ় বয়সে এই সংগঠন অনেক জ্ঞান-অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করেছে। এসবই যেন তোমার এবং তোমার জনগণের হোমরূপে বলিদান করে তোমার সৃষ্টি ও রক্ষা কর্মের সহভাগী হতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top