গঠন-সৃজন-মুক্তি-উন্নয়ন

শিশু মাতৃগর্ভ থেকেই একটি রুপ বা প্রকৃতি বা আকৃতি বা গঠন লাভ করে এবং ভবিষ্যতেও তাই করবে। ধীরে ধীরে সুপরিকল্পিত ভাবেই একদিন ভূমিষ্ঠ হয়ে ধরণীতে তার আগমন ঘটেছিল। সুতরাং জীবনে ভিত্তি গঠনের সূত্রপাত মাতৃগর্ভ থেকেই। পৃথিবীতে আসার পর সে প্রথমত তার পরিবারের মা—বাবা ও অন্যান্যদের গঠন পেয়ে বেড়ে উঠতে থাকে। শিশুর গর্ভাবস্থা এবং ভূমিষ্ঠ হওয়া, এই দুটো ব্যাপারে মায়ের ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মায়ের উদরে এবং পরে মায়ের সবচেয়ে কাছে থাকে এই শিশু। সুতরাং জীবন গঠনে প্রথম ভূমিকা পালনকারী হলেন ‘মা’। শিক্ষা জীবন শুরুর সাথে আচার, নৈতিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় মূল্যবোধ,আদর্শ, ধর্মীয় অনুশাসন শিশুকে সঠিক পথে ধাবিত করতে বা সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদানে সাহায্য করে।

যেখানে ভিত্তিটাও মজবুত হয়। ধর্ম মানুষের জীবনকে নৈতিকতার পথে চলতে সাহায্য করে। একটি সুশীল সমাজ গঠনে ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং আদর্শের প্রয়োজন রয়েছে। ধর্মের আদর্শে জীবন ও সমাজ গঠনে, সৃজনশীল উদ্ভাবন সম্ভব। শিশু কালেই শুরু হয় নেতৃত্ব এবং নেতৃত্বের প্রভাব। সাংগঠনিক কার্যক্রমের দ্বারা তৈরি হতে থাকে নেতৃত্ব এবং সাংগঠনিক গঠন। এ সময়টাতে শিশু কিশোর- কিশোরীদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সুপ্ত প্রতিভা এবং নেতৃত্বকে বিকশিত করার একটি সুবর্ণ সুযোগ থাকে। জীবন গঠন, সমাজ গঠন এবং সংগঠন এই তিনটি বিষয় একটি অপরটির সঙ্গে পরিপূরক। একটি বাদ দিয়ে অন্যটি পূর্ণতা পায় না। নতুন প্রাণকে সংঘবদ্ধ করার দায়িত্ব আমাদের। কারণ সংগঠন এবং সংঘবদ্ধ জীবন হলো নেতৃত্ব তৈরির প্রথম ধাপ।

সুতরাং সংগঠনের উপর গুরুত্ব প্রদান এবং সংঘবদ্ধকরণ সমাজের জন্য খুবই জরুরি। সুষ্ঠু গঠন থেকে যথাযথ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্ভর করে। শিশুর বা ভবিষ্যতের জন্য কি সৃষ্টি করছি বা কি আদর্শ রেখে যাচ্ছি, যা রেখে যাচ্ছি তা কি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য প্রযোজ্য কিনা? ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে? সৃষ্টির আদর্শ কি মঙ্গলকর নাকি ভোগান্তির? সমাজ গঠনে সুষ্ঠু নেতৃত্ব সৃষ্টি করা। কেন নেতৃত্ব সৃষ্টি হচ্ছে না এর জন্য দায়ী কে বা কারা? সমাজের অধপাতের কারণ হিসেবে যুব সমাজকে দায়ী করা হয়! শুধুই কি তারা দায়ী নাকি দক্ষ নেতৃত্ব ও পরিচালনার অভাব রয়েছে?

তরুন নেতৃত্ব, যুব নেতৃত্ব, বয়স্ক নেতৃত্ব ও নারী নেতৃত্ব এবং নেতৃত্বের মাঝে যোগাযোগ রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সমাজের প্রধান অন্তরায় কি যুব সমাজ নাকি নেতৃত্ব? অন্তরায়গুলো কি কি, সমাধান প্রক্রিয়া কি হবে? যুব সমাজের উন্নয়নে কি ভূমিকা এবং কি কি উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে? এই বিষয়গুলো অবশ্যই সমাজের চিন্তাশীল ও বিচক্ষণ ব্যক্তিবর্গরা আবদান রাখবেন। সমাজের অপসংস্কৃতি, গ্রাম্য রাজনীতি, নেতৃত্বের নামে ক্ষমতা এগুলো সমাজের ভবিষ্যতকে নষ্ট করে। সৃষ্টির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা কি, সৃষ্টির লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য কি, উন্নয়নশীল চিন্তা করা, নেতৃত্বের পরিবর্তন করা, সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন করা অর্থাৎ একটি সুস্থ্য সমাজের সৃষ্টি।

মানুষ এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, শিশু, কিশোর, যুব, বৃদ্ধা, মাদকাসক্তি, নারী, প্রতিবন্ধী, শোষণ, বঞ্চনা, অধিকার এবং নেতৃত্বের মুক্তি সাধন প্রয়োজন। মানুষ ভুল পথে যাবে, অপরাধ করবে তবে, শুদ্ধতার সুযোগ এবং সঠিক নির্দেশনা প্রদানে সমাজ পরিচালকদের ভূমিকা রয়েছে। রজনী কান্ত, তার গানে বলেছেন— তুমি নির্মল কর মঙ্গল করে, মলিন মর্ম মুছায়ে…। মলিনতা নির্মূল করেই মঙ্গল সাধন হবে তাই আমাদের নিজেদের মঙ্গলের জন্য নিজেদেরকে নির্মূল করার, কোন বিকল্প নেই।

মি. কাজল রোজারিও

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top