বনপাড়া ক্রেডিট ও কিছু কথা

অনেক প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বনপাড়ার বর্তমান ক্রেডিট। অনেক নিবেদিত ব্যক্তির সুচিন্তিত কার্যক্রমের ফসল এই ক্রেডিট। এই সকল ব্যক্তিদের মধ্যে ফাদার লুইস পিনোস একজন। ঈশ্বরভক্ত গৃহত্যাগী মানুষটির কথা বনপাড়া ক্রেডিট কোনদিন ভুলবেনা। তিনি এসেছিলেন খ্রীষ্টের বাণী প্রচার করতে। এখানে এসে তিনি মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েন। চারিদিকে ছিল রোগ-শোক, অভাব-অনটন। কি করে তিনি মানুষের মুখে হাসি ফুটাবেন এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে বাঁচাবেন, সে বিষয়ে চিন্তা করতে লাগলেন। তাই তিনি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। অনেক পরিশ্রম এবং চিন্তাভাবনার পর তখনকার কিছু শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করে বনপাড়া ক্রেডিটের রূপরেখা তুলে ধরেন। ঐ সকল শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন-প্রয়াত পল আগষ্টিন গমেজ, পিটার পিরিছ, ফ্রান্সিস কস্তা, ফ্রান্সিস ক্রুশ এবং আরও অনেকে। সেই মোতাবেক ০১/১১/১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বর্তমান বনপাড়া ক্রেডিট। তখনকার দিনে খ্রীষ্টান সমাজের অবস্থা ভাল ছিলনা। অনেক কষ্ট করে চার আনা আট আনা জমা করে শুরু হয়েছিল ক্রেডিটের যাত্রা। পূর্ব পুরুষদের অনেক ত্যাগ স্বীকার ছিল বর্তমান এই ক্রেডিটের পিছনে। আজ আমরা স্মরণ করব আত্মত্যাগী পূর্বপুরুষদের কথা এবং তাদের অবদানের কথা। আজ আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি এটা তাদের এবং আমাদের অহংকার। আমরা খ্রীষ্টান সমাজ আজ ক্রেডিটের গর্বে গর্বিত।

ক্রেডিট একটি অর্থলগ্নিকরণ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যার মাধ্যমে সদস্য-সদস্যাদের জমাকৃত অর্থ আবার তাদের মধ্যে স্বল্প সুদে লগ্নি করা হয়। এখানে মহাজনের দৌরাত্ব নেই, অধিক সুদ নেই, সুদ যা আছে সেটা লভ্যাংশ হয়ে সকলের মাঝে বছর শেষে বন্টন করা হয়। আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক জীবনের এটা একটা বড় চাবি-কাঠি। ক্রেডিটের মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু করেছি এবং সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। আমাদের সন্তানরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে এবং নিজেদেরকে নুতনভাবে চিনতে শিখছে।

বিশ্বে অনেক বড় বড় ক্রেডিট আছে যাদের স্বপ্ন এবং সাফল্য আকাশচুম্বি। এই সকল সদস্য-সদস্যারা ক্রেডিটের মাধ্যমে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থানকে উন্নতির শিখরে নিয়ে গেছে যা স্বপ্নের মত মনে হয়। আজ আমাদেরও ভাববার এবং স্বপ্ন দেখার সময় এসে গেছে। ওরা যদি পারে আমরা কেন পারব না? আমাদের চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজে নামতে হবে। এই চ্যালেঞ্জের একমাত্র চাবি-কাঠি হলো মূলধন এবং বলিষ্ঠ বিপনন ব্যবস্থা। আমরা এর মাধ্যমে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সফল হব। সকলেই স্বপ্ন দেখে একটি আধুনিক টেকসই ক্রেডিটের, যার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারব। বর্তমানে ক্রেডিটের বাজারমুখি অর্থনীতি প্রতিযোগিতাপূর্ণ। যাদের মূলধন বেশী এবং বিপনন ব্যবস্থা উন্নতমানের তারাই টিকে থাকবে। আগে ক্রেডিটকে শুধুমাত্র সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে দেখা হতো। বর্তমান বাজারমুখী প্রতিযোগিতাপূর্ণ অর্থনীতিতে সেবাদান ছাড়াও আরও অনেক কর্মকান্ড আছে যেগুলি সদস্য-সদস্যাদের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন বয়ে আনতে পারে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান আমরা চালু করতে পারি। যেমন- সমবায় বাজার। যেখানে সদস্য-সদস্যাগণ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারবে। সময়বায় কৃষি বাজার। যেখানে কৃষি কাজের জন্য সকল মালামাল পাওয়া যাবে। সমবায় মেডিক্যাল ষ্টোর, যেখানে সবধরণের ঔষধ এবং ছোটখাট সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা থাকবে। ছোটখাট পরিবহন ব্যবস্থা করা যেতে পারে, যেখানে চাহিদা অনুযায়ী মালামাল পরিবহনের সুযোগ থাকবে। উলে­খিত সকল কিছুতে বেকার শিক্ষিত যারা তাদের চাকরীর সুযোগ থাকবে। আমরা ইতিমধ্যে কিছু অর্থনৈতিক প্রোডাক্ট চালু করেছি। বর্তমানে বনপাড়া ক্রেডিটের জন্য উলে­খিত বিষয়গুলি স্বপ্ন নয়, বরং আগামী দিনের সাফল্য। এই সফলতাকে কার্যে পরিনত করতে আমাদের থাকতে হবে মোটা মূলধন এবং সকলের ত্যাগস্বীকার ও উন্নত আধুনিক চিন্তাধারা। বর্তমানে আমাদের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আধুনিক চিন্তাধারার প্রতীক। যেকোন মূল্যে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে। বিশ্বস্তভাবে সকলে কাজ করা আধুনিক ক্রেডিটের একটি বড় শর্ত। যারা পরিচালনা করবেন তাদের অবশ্যই ক্রেডিটের জন্য চিন্তাধারা থাকতে হবে ।

সেই সাথে যথেষ্ঠ সময় প্রদান করতে হবে। দেশ-বিদেশের ক্রেডিটের সংগে যোগাযোগ এবং বিভিন্ন সভা সেমিনারে যোগ দিতে হবে। এর মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করে ক্রেডিটকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। বর্তমান প্রজন্মকে ক্রেডিটের হাল ধরার শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে এবং তাদেরকে খাটি এবং বিশ্বস্ততার আলোকে গড়ে তুলতে হবে। কারণ এরাই ভবিষ্যৎ এবং এরাই হবে ক্রেডিটের কান্ডারী। অনেকে ক্রেডিটের বিষয় কিছু ভুল ভেবে থাকে যেমন: ক্রেডিট পরিচালনা যারা করে তারা টাকা পয়সা আত্মসাৎ করতে পারে এবং বেশী সুবিধা নিয়ে থাকে। ক্রেডিটের মূলধন বাড়লে বেশী রকম অনিয়ম দেখা দিবে তাই যেমন ভাবে চলছে তেমন চলুক নতুন কোন কিছু করা যাবে না এটা ভুল ধারনা। বর্তমানে সদস্য-সদস্যারা বছরে যেপরিমাণের লভ্যাংশ পায় এর চেয়ে আরো বেশী আমরা আর্জন করতে পারবো যদি মূলধন বেশীথাকে এবং লাভ জনক প্রোডাক্ট চালু করা যায়। বর্তমান নিবার্চন পদ্ধতি কিছুটা শংকিত হবার মত। আগেকার নির্বাচন পদ্ধতি শান্তি পূর্ণ ছিলো। ক্রেডিটের সুনামকে অক্ষুন্ন রাখতো। বর্তমান ক্রেডিট নির্বাচন পদ্ধতি রেসারেসি পর্যায়ে চলে গেছে যেটা সামাজিক এবং ক্রেডিটের জন্য মঙ্গলজনক নয়। আমাদের শান্তি পূন্য অবন্থানকে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করা দরকার। ক্রেডিট নিবার্চনে যারা অংশগ্রহণ করবে তাদের জন্য সাধারণ কিছু শর্ত থাকে।
১। সদস্য সদস্যাদের সেবাদান করাই এখানে সব।
২। প্রতিষ্ঠানটি সুষ্ঠ পরিচালনা করার জন্য যথেষ্ঠ জ্ঞান থাকা।
৩। ক্রেডিটের জন্য যথেষ্ঠ সময় প্রদান করা এবং বিশ্বস্থ ভাবে সকল কাজ করা।
৪। অন্যান্য ক্রেডিটের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
৫। একে অপরকে সন্মান প্রদর্শন করা।
মোটা মোটি উলে­খিত বিষয় গুলি চিন্তা ভাবনা করে নিবার্চন করলে ভাল ফল বয়ে আনবে। মনে রাখতে হবে আমাদের পূর্ব পুরুষদের চিন্তা ধারা ও ত্যাগ স্বীকারের ফসল বর্তমান আমাদের এই প্রাণ প্রিয় ক্রেডিট। যে কোন মূল্যে আমরা সকল সদস্য-সদস্যাগণ রক্ষা করবো আমাদের এই ক্রেডিট। তাই সর্ব কালের সুনাম রক্ষার্থে কিভাবে নিবার্চন সুন্দর সুষ্ঠ হবে এবং কারো দিকে অপ্রিয় বাক্যবান বর্ষিত হবেনা, মানমর্যাদা ক্ষুন্ন হবে না, সেদিকে লক্ষ রেখে যেন নিবার্চন করি। আমরা জানি একতাই মহা বলের বল, তাই একতার ঝান্ডা হাতে নিয়ে সকল সংকীর্নতা ভুলে আগামী দিনে ক্রেডিটের উন্নতিকল্পে আমাদের কাজ করে যেতে হবে। ঈশ্বর আমাদের মঙ্গল করুন।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top