অর্থনীতির ভাষায় বলতে হয় সম্পদ সীমিত কিন্তু চাহিদা অসীম। অর্থাৎ মানুষের অসীম চাহিদার তুলনায় সম্পদের পরিমাণ কম বা সীমিত। মানুষের রুচিবোধ প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। রুচির এই পরিবর্তনের ফলে তাঁর চাহিদার পরিমাণও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। যে পরিমাণে চাহিদা বৃদ্ধি পায় সে পরিমাণে সম্পদ বৃদ্ধি পায় না বা সম্পদ কম। তাই এই সীমিত দ্বারাই অসীম চাহিদা পূরণ করতে হয়। এই কারণে সবার আগে নির্বাচন করতে গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা কোনটি। চাহিদা আসীম এবং সম্পদ সীমিত এই ভাবনা থেকেই সঞ্চয়ের উদ্ভব। অর্থাৎ ভবিষ্যতের নিশ্চিয়তার জন্য সম্পদ প্রয়োজন, যা হলো সঞ্চয়। আজকের সম্পদ আগামী দিনের সম্ভাবনা।
প্রফিডেন্ট ফান্ড, চাকরির ক্ষেত্রে প্রতি মাসের বেতনের একটি নির্দিষ্ট ক্ষুদ্র অংশ জমা রাখা হয়। এবং চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার সময় বড় অংকের অর্থ প্রদান করা হয়। যা কিনা সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ জমা হয়ে বিরাট অংকের অর্থে পরিণত হয়, যা হলো সঞ্চয় বা গচ্ছিত অর্থ। যার কারণ হলো চাকরি থেকে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পর যেন বাকি সময়টা সাচ্ছন্দ্যে, সুখে অতিবাহিত করতে পারে। অর্থাৎ সঞ্চয় হলো আয়ের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ যা ভবিষ্যতে সম্পদ রুপে পরিণত হয়।
বিনিয়োগ কেন করা হয়? লাভ, মুনাফা, সুদ, সেবামূল্য যাই বলি না কেন সবকিছুই হলো বিনিয়োগের উদ্দেশ্য। আজকের সম্পদ আগামী দিনের সম্ভাবনা। একজন দিনমজুর তার সারাদিনের কাজের পারিশ্রমিক দিয়ে সন্ধ্যায় চাউল ক্রয় করে বাড়ি ফিরেন। গৃহিনী রাতে রান্না করে অবশিষ্ট চাউল রেখ দেয় পরের দিন সকাল এবং দুপুর পর্যন্ত যেন তা খেতে পারে। কারণ পুনরায় সন্ধ্যায় চাউল ক্রয় করা হবে। অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য এবং অবশিষ্ট চাউল হলো তার সঞ্চয়।
ছোট বেলায় মেলা থেকে মাটির ব্যাংকটুপা কিনে আনতাম পয়সা জমানোর জন্য। এবং কোন একটি উদেশ্য থাকতো যে সে টাকা দিয়ে কি করব। আজও মাটির ব্যাংকটুপা আছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে পরিবর্তন হয়ে ব্যাংক প্রতিষ্ঠান, ক্রেডিট ইউনিয়ন, এনজিও’র সৃষ্টি হয়েছে। যার একটি উদেশ্য হলো সঞ্চয়। অনেকের চিন্তা ভাবনা হলো আমার টাকা আমি নিজই তো জমাতে পারি, ব্যাংকে বা ক্রেডিটে কেন? আপনি টাকা জমা রাখবেন নিশ্চয়তার জন্য। ব্যাংক প্রতিষ্ঠান বছর শেষে আপনার সঞ্চয়ের উপর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ লভ্যাংশ প্রদান করবে। লভ্যাংশের জন্য না হোক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ একটা সময় বড় অংকের অর্থ হবে যা আপনি কল্পনা করতে পারবেন না। ধরুন পাঁচ বছরে আপনি পঞ্চাশ হাজার টাকা জমিয়েছেন। এটা নিশ্চিত যে পাঁচ বছরে নিজের কাছে টাকা রেখে কখনও আপনি পঞ্চাশ হাজার টাকা জমাতে পারতেন না। কারণ অভাব অনিশ্চয়তা, তা হতে দিবে না। এবং টাকার ধর্ম হাত বদল হওয়া।
আমাদের সঞ্চয় জমাজোর প্রবণতা তৈরি করতে হবে। তা যে শুধু ভবিষ্যতের জন্য সেটা নয়, যে কোন সময় যে কোন মূহুর্তে যেন টাকার অভাব লাঘব করা যায়। গ্রামে প্রবাদ আছে ” যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ”। অতীত তো চলে গেল, বর্তমানে ভালোই আছি বা চলে যাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যৎ তো অনিশ্চিত কি হবে তা বলা যায় না। তাই ভবিষ্যতে অর্থের অভাব কিছুটা হলে লাঘব করার জন্য নিশ্চয়তা প্রদান করে বনপাড়া খ্রিস্টান কো অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ সহ বিভিন্ন ক্রেডিট ইউনিয়ন গুলো। আমানত বা সঞ্চয় আপনার চলার শক্তি। নিজে সঞ্চয় বৃদ্ধিতে প্রত্যয়ই হই এবং শিশুদেরও এ কাজে উদ্বুদ্ধ করি। সকলেই আর্থিক ভাবে স্বচ্ছলতা অর্জন করি।
— মি. কাজল রোজারিও