অসচ্ছল সংসার হলেও হাল ছাড়েনি তিথি। নিতান্তই এক অজপাড়া গায়ে জন্মগ্রহণ করে তিথি। ছোট দুই বোন আর তিথি এবং তাদের বাবাকে নিয়ে তাদের পরিবার। তার ছোট বোন যখন জন্ম গ্রহণ করে, তখনই তার মা মারা যায়। পরিবারে উপার্জনকারী শুধু তিথির বাবা। দুই বোন আর তিথি খুব কষ্টেই দিনগুলো পার করছিল। তিথি খুব ভাল ছাত্রী ছিল, স্কলারশীপ এর টাকায় লেখাপড়া করতো। হঠাৎ তিথির বাবাও অসুস্থ্য হয়ে পড়লো। তিথি বড্ড নিরুপায় হয়ে পড়লো। সে চিন্তা করলো তাকে আর এভাবে বসে থাকলে চলবে না। সংসারের অসচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে কিছু একটা করতে হবে। পরিশ্রম, নিষ্ঠা, সততা আর মেধাকে পঁুজি করে পা বাড়িয়েছেন তিথি। এই নিয়ে চলাই আজ তাকে শিল্পোদ্যেক্তা অদম্য একজন নারী হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তিনি নানা চড়াই—উৎরাই পেরিয়ে নিজেকে একজন সফল নারী উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে দাড় করিয়েছেন। আজ তিনি প্রতিষ্ঠিত একজন নারী। সে সমাজে এবং নিজের গ্রামের নারীদেরকে নিয়ে কাজ করা শুরু করে। সে চিন্তা করতে থাকে কিভাবে শুরু করবে। পেপার পত্রিকায় সে বিভিন্ন গল্প বা লেখা পড়তে থাকে এই নারী সমাজকে নিয়ে। সে ভাবে নারীদের এগিয়ে নেবার ক্ষেত্রে বেগম রোকেয়া কত কিছুই না করেছেন। তিনি ভাবে অল্প পুঁজি খাটিয়ে কিছু দিয়ে সে স্বল্প পরিসরে ব্যবসা শুরু করবে। কিন্তু তিতির বাবা তাতে একমত নয়। সে বলে মেয়ে হয়ে তুমি ব্যবসা করবে এটা কেমন হবে। তিথি তার বাবাকে সুন্দরভাবে বুঝালো, বাবা আজকের নারী সমাজ আর পিছিয়ে নেই। কেন তুমি দেখতে পাচ্ছনা, মেয়েরা বা নারীরা এখন দেশ চালাচ্ছে, বিমান চালাচ্ছে, বড় বড় অফিসার আজকের নারীরা। তাহলে আমি কেন পারব না? তিথির এই প্রশ্নটাকে তার বাবা গভীরভাবে চিন্তা করলো। সেও বুঝতে পারলো তার মেয়ে তো ভুল কিছু বলেনি। বাবার আশীর্বাদ নিয়ে তিনি তার পথ চলা শুরু করলো। তার পরিশ্রম, সততা, আর মেধাকে কাজে লাগিয়ে মহিলাদেরকে নিয়ে কাজ শুরু করলো। সে ভাবলো কোন কাজটা নিয়ে সে এগোবে। অনেক চিন্তা ভাবনার পর সে খুজে পেল খাবারের আইটেম। তাই সে প্রথমে ২ জন মহিলাকে নিয়ে একটি দোকান দিল। যেখানে কিনা সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দুপুরের আহার এমনকি ফাষ্টফুড জাতীয় খাবারও পাওয়া যায়। তিথির এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা আস্তে আস্তে প্রসার লাভ করে। তিনি এখন একটি বড় নাম করা হোটেলের মালিক। তার আয়ত্বে এখন প্রায় ৪০ জন মহিলা কাজ করে। তিনি তার ছোট বোনদের ভাল স্কুলে পড়াতে পারছে। তাদের সংসারে আর সেই অসচ্ছলতা নেই। তাহলে আমরা প্রত্যেকটা নারীযদি এভাবেই তিথির মত সাহস ও সততা নিয়ে এগিয়ে যাই, তাহলেপ্রত্যেকটি নারীই সফলতা বয়ে আনবে। তাইতো আজকের নারী সমাজ একই কন্ঠে বলে উঠে
“ আমরা নারী সব করতে পারি”
-মিসেস মীরা মন্ডল